শিরোনাম:

আগস্টে দেশের আলোচিত ঘটনা ফেনী ডিবির স্বর্ণকান্ড 

লোভই কাল হলো ফেনীর ৬ ডিবি কর্মকর্তার জীবন

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১


ফেনীর কথা রিপোর্টঃ বাংলাদেশের ইতিহাসে নানা অঘটনের মাস আগস্ট এবার ফেনীতে নানা অঘটনের জন্ম দিয়েছে। জেলার ৬ ডিবি কর্মকর্তা কর্তৃক ব্যবসায়ীর স্বর্ণের বার ছিনতাই, পরবর্তীতে গ্রেপ্তার, স্ত্রী কর্তৃক প্রবাসী স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা, শিক্ষক নামীয় এক নরপশুর হাতে অবুঝ ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু ও শ^শুর বাড়ির লোকদের লেলিয়ে দেয়া স্বর্প দংশনে গৃহবধুর মৃত্যু পথযাত্রী হওয়ার লোমহর্ষক ঘটনা অন্যতম।  

তবে সব ঘটনাকে ছাপিয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় তোলে ফেনী ডিবি পুলিশের স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত ৮ আগস্ট বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারব্রিজের সামনে ফেনী গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মোঃ সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়ার নেতৃত্বে ৬ কর্মকর্তা পূর্ব খবরের ভিত্তিতে ঢাকাগামী চট্টগ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাসের গাড়ীর গতিরোধ করে অস্ত্র ঠেকিয়ে ২০টি স্বর্ণের বার ছিনতাই করে। যার ওজন ২ কেজি ৩৩০ গ্রাম ও বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৬ টাকা। এ ঘটনায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাস ফেনী ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ এনে ফেনী পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরন্নবী বিষয়টি আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক অনুসন্ধানে নামেন ও ঘটনার সত্যতা পান। পরে ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি ফেনী থানায় ডাকাতির মামলা দায়ের করলে ১০ আগস্ট ৬ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি মোঃ সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, এসআই মোতাহের হোসেন, এসআই নুরুল হক, এসআই মিজানুর রহমান, এএসআই অভিজিত বড়ুয়া ও এএসআই মাসুদ রানা। গ্রেপ্তারকৃত ডিবি কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বর্ণের বার ছিনিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে এবং ডিবি ওসি সাইফুলের বাসার আলমিরার ড্রয়ার থেকে ১৫টি স্বর্ণ বার উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বরখাস্ত করা হয় ও তাদের একাধিকবার রিমান্ডে নেয়া হয়। বর্তমানে গ্রেপ্তারকৃতরা জেল হাজতে রয়েছে। মামলার নথি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র কাছে হস্তান্তর হয়। পিবিআই তদন্তে ঘটনার আরো তথ্য বেরিয়ে আসে। পিবিআই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে গোপাল কান্তি দাসের সাবেক ব্যবসায়ী পার্টনার ছমদুল করিম ভুট্টুকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত ভুট্টু ফেনীর আদালতে ঘটনার সাথে তার যোগসাজশের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়। ভুট্টু ও গোপাল দু’জনের বাড়ী কক্সবাজার জেলায়। ভুট্টু কুতুবদিয়া থানার দক্ষিণ ধুরং গ্রামে আর বাদী গোপাল কান্তির বাড়ী চকরিয়াতে। 

তারা দু’জনে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী লেনের ইক্যুইটি কোহিনুর মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় “আলো জুয়েলার্স” নামে একটি স্বর্ণের দোকান পরিচালনা করতো। ব্যবসায়ীক বনিবনা না হওয়ায় কয়েক মাস আগে তারা পৃথক হয়ে যায়। মূলত ব্যবসায়ীক বিরোধের জেরেই ভুট্টু ফেনী জেলা ডিবি পুলিশের ওসি সাইদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে এই স্বর্ণ লুটের পরিকল্পনা করে। ফেনী ডিবির ৬ কর্মকর্তার স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনাটি তখন ফেনীসহ সারা দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় তোলে। অনেক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এ ঘটনায় প্রধান খবর হয়। ঘটনাটি পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি সারা দেশের মানুষকে বিস্মিত ও হতবাক করেছে। পুলিশ যেখানে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার কাজ করবে, সেখানে লোভে পড়ে ফেনীর ৬ ডিবি কর্মকর্তা কর্তৃক অস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যবসায়ীর স্বর্ণ ডাকাতি ও তা হজম করার উদ্ভট চিন্তা এ যেন মগের মল্লুকের কান্ড। ডিবি কর্মকর্তারা এমন কান্ড ঘটিয়ে তারা নিজেদের অকাল কুম্মান্ড ও অজমূর্খতার পরিচয় দিয়েছে। আর তাৎক্ষণিক তাদের গ্রেপ্তার ও আইনের সোপর্দ করে একজন দৃঢ়চেতা ও প্রাজ্ঞ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়েছেন, বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল পাওয়া ফেনী’র পুলিশ সুপার খন্দকার নূরুন্নবী বিপিএম পিপিএম। তখন ফেনীসহ সারাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসায় ভাসেন সময়ের সাহসী এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

অতি লোভই যে মানুষের জীবনে ধ্বংস ডেকে আনে ফেনী ডিবি’র ৬ কর্মকর্তাই তার জ্বলন্ত উদাহরণ। জড়বুদ্ধি সম্পন্ন বা অকার্য মূর্খ ফেনী ডিবি’র ৬ কর্মকর্তার জীবনে এখন নেমে এসেছে অকূল পাথার। 

লোভে পড়ে স্বর্ণ ডাকাতি, পরবর্তীতে বরখাস্ত হওয়া ও জেলবন্দি হয়ে তারা এখন অকূলে কূল না পাওয়ার অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আর তাতে বলা যায় “লোভই কাল হলো ফেনীর ৬ ডিবি কর্মকর্তার জীবন।”